বিগত সপ্তাহান্তে বাংলা একাডেমীর নতুন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি নতুন বইয়ের হাইপ্রোফাইল বা মর্যাদাবান প্রকাশনা উৎসব। বইটির লেখক ভারতীয়, প্রকাশক এ দেশের লব্ধপ্রতিষ্ঠ ইংরেজি ডেইলি স্টার। প্রকাশকের জ্ঞাতিকুটুম্ব (প্রতিষ্ঠানের মালিকানার বড় শরিকের সূত্রে) বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলোয় পরদিন (১৭ নভেম্বর) শেষ পাতায় আকর্ষণীয়ভাবে আয়তরেখাবন্দী করে ওই অনুষ্ঠানের একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার চমকপ্রদ শিরোনাম, উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে, ‘দেশ ভাগ একটি ভুল’।
ওই দিনই সন্ধ্যায় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বৈঠকখানায় টকশোতে অংশ নেয়ার জন্য অপেমাণ কিছু বিজ্ঞ নাগরিকের একজনের নজরে পড়ল ওই শিরোনাম। একরকম চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘এই যে, আবার শুরু হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র সাব্যস্ত করার প্রচার শুরু করেছিল, এরা এখন অন্য কায়দায় বাংলাদেশের ভারতভক্তির পাঁয়তারা শুরু করেছে।’ তার এমন ধারণা শুধরাতে আরেকজন বলে উঠলেন, ‘ভুল করছেন, এটা প্রথম আলোর উদ্যোগ নয়, প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে মাত্র। আর শিরোনামটি উদ্ধৃতি। ভারত বিভাগের সময় পাকিস্তানের ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারতযাত্রার বেদনাদায়ক স্মৃতি থেকে এ কথা লিখেছেন ভারতের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কূটনীতিবিদ কুলদীপ নায়ার।’ দ্বিতীয় বক্তা পত্রিকা থেকে পড়ে শোনালেন : কুলদীপ নায়ার বলেছেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, ভারতীয়, পাকিস্তানিÑ এসব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এখন আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ঐক্যবদ্ধ একটি দণি এশিয়া গড়তে হবে। দেশ বিভাগের পর আমি পাকিস্তান ছাড়ি, আমার পরিবারের সাথে বিদায়ের সময় কান্নার যে মুহূর্ত এমন অনেক কিছুই আমি পারিনি তুলে ধরতে। দেশ বিভাগের পর লাখ লাখ উদ্বাস্তু মানুষ যখন দেশ ছাড়ছিল, তখন হেলিকপ্টার থেকে তা দেখে জিন্নাহ কপাল চাপড়ে বলেছিলেন, এ তিনি কী করলেন! আমার অনুভূতি হলো, দেশ বিভাগ ভুল ছিল। দেশ বিভাগের প্রেতি না হলে এই উপমহাদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা হতো না।’
এবার একজন তৃতীয় বক্তা টিপ্পনি কাটলেন, ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তি তো দেশ বিভাগের পরে নয়, অখণ্ড ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার আমলে। ১৮১৭ সালের হিন্দু কলেজে তার গোড়াপত্তন, তার রাষ্ট্রবিজ্ঞানসম্মত রূপ দিয়েছিলেন বীর সাভারকর। মুসলিম লীগ সে পথে এগিয়েছে আরো পরে ১৯৪৩ সালে। ভারত বিভাগের পর খোদ ভারতেই এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বর্ণাশ্রমের ভেদবুদ্ধি বেশি করে ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাত নেই বললেই চলে। তাহলে আমরা কেন সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হওয়ার বাহানায় অন্য নামে শিথিলভাবে হলেও অখণ্ড ভারতভুক্ত হতে যাবো?’ চতুর্থ বক্তা বললেন, ‘কপাল চাপড়ে জিন্নাহ সাহেব কখনো বিলাপ করেছেন, এটা তার সাহেবি মেজাজ চালচলনের সাথে মেলে না; কোনো ঐতিহাসিক বা জীবনী লেখক এমন কথা কোথাও লেখেননি। তা ছাড়া ধর্মভিত্তিক বাসিন্দা বদল বা পপুলেশন ট্রান্সফারের কথা তো জিন্নাহ বলেননি, বলেছিলেন ভারতীয় কংগ্রেস নেতারা।’ একজন পঞ্চম বক্তা প্রশ্ন তুললেন, ‘পাকিস্তান ছেড়ে আসার মনোবেদনা থেকেই যদি বইটি লেখার হুপ জন্মে থাকে, তাহলে তো এর প্রকাশ হওয়া উচিত পাকিস্তানে; বাংলাদেশে কেন?’ সে সম্পর্কে প্রকাশক পরিবারের ব্যাখ্যা পেশ করতে দ্বিতীয় বক্তা আবার মুখ খুললেন। পত্রিকা থেকে পড়লেন, প্রথম আলো সম্পাদক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, দুই নেত্রী, রাজনীতি এসব নিয়েও তিনি বিস্তারিত লিখেছেন বইটিতে। তিনি মনে করেন, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে। তিনি সেই কারণ খুঁজে ফিরছেন।’
তৃতীয় বক্তা টিপ্পনি কাটলেন, এই প্রকাশনা উৎসবের ধুমধাড়াক্কার পেছনেও নিশ্চয় ‘অন্য কোনো ঘটনা আছে!’ দ্বিতীয় বক্তা পড়ে চললেন : ‘ড. কামাল হোসেন বলেন, একটি অসাধারণ বই; কুলদীপ নায়ারের যে বিষয়টির কথা উল্লেখ করতে হয় তা হলো, দণি এশিয়ার মানুষের প্রতি তার যে ভালোবাসা, তার যে প্রতিশ্র“তি, এর কোনো তুলনা হয় না। (প্রকাশক প্রতিষ্ঠান প্রধান ডেইলি স্টার সম্পাদক) মাহফুজ আনাম বলেন, ২০ বছর আগে কুলদীপ নায়ার পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন; ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের কাজও করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দণি এশিয়ার দেশগুলো এক হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী হতে পারে।’
চতুর্থ বক্তা এবার বললেন : “দণি এশিয়াজুড়ে নিবিড় রাষ্ট্রপুঞ্জ গড়ার স্বপ্ন বা বিশ্বাস যদি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ঔপনিবেশিক স্মৃতিমুগ্ধ কোনো ব্যক্তি পঁয়ষট্টি বছর ধরে পুষে থাকেন, বাদ সেধে তার মোহভঙ্গ করব না। কিন্তু বাস্তবে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টান্তের কথা বলা হলো, তার শক্তি কোথায়? ইউরো জোনে শামিল হয়ে পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, গ্রিস এসব ভূমধ্যসাগরীয় দেশ এখন ফতুর হতে বসেছে। ইউরোপজুড়ে চলছে সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক বিােভ। লন্ডন, বার্লিন, প্যারিস, ব্রাসেলসের মতাধর সুবিধাভোগী ইউরোপীয় নেতারা মার্কিন শক্তির বদৌলতে ন্যাটো জোটের গোপন ও প্রকাশ্য সমরকৌশল প্রয়োগে মত্ত ভূমধ্যসাগরীয় আরব দেশ লিবিয়া ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ-অশান্তি পাকিয়ে তুলে ফায়দা লোটার নয়া ঔপনিবেশিক কারসাজি ফেঁদেছে এরা। তাতে এখন আর ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা থেকে নাগরিক দৃষ্টি ফিরছে না। এ দিকে ভারতজুড়ে চলছে নৃতাত্ত্বিক বৈষম্যের পীড়া, বঞ্চিত বা অবদলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ। রিজার্ভ পুলিশ, দমন আইনের সাত খুন মাফ বিশেষ মতা আর সৈন্যবল দিয়ে সেই প্রতিরোধ ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে। স্বাধীন নাগা, স্বাধীন অহম, স্বাধীন কামতাপুরী, স্বাধীন ত্রিপুরী বৈরিতার উত্তর-পূর্ব ভারতীয় চোরাবালি আর গেরিলা নকশাল উপদ্রুত মধ্যভারতীয় ফল্টলাইন বা বিচ্যুতি রেখা নেপালের পাদদেশ থেকে দণি ভারতের অন্ধ্ররাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই ঝুঁকির বেড়ি পেরিয়ে আমরা কেন দিল্লির দিকে তাকাতে যাবো? বাংলাদেশের কৃষক প্রতিরোধ ১২৫ বছর ধরে ইংরেজের সিপাই আর জমিদারের পাইক-বরকন্দাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বাতন্ত্র্য আর আত্মমর্যাদাবোধ বজায় রেখেছে। সেই স্বাতন্ত্র্য ভিক্টোরিয়ার আমলে স্বীকৃতি পাওয়ার পর সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তী প্রজন্ম দুই বিশ্বযুদ্ধের যুগসন্ধিতে ইংরেজি স্কুলে পড়ে ইংরেজি কায়দা-কানুন রপ্ত করে ইংরেজের ভারতবিভক্তিকালে ভোটযুদ্ধে পাকিস্তানের প নিয়েছে, অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। নিজেদের মতো করেই আমরা বাঁচছি, স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বায়নপ্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতাম অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করেছি, প্রবৃদ্ধির মুখ দেখতে শুরু করেছি। আমরা কেন ফের দিল্লির আঁচল ধরতে যাবো? আমাদের ুদ্র পরিসরই ভালো, স্মল ইজ বিউটিফুল। জনসম্পদে আমরা খাটো নই, জনসংহতিও ‘দশটা লতা পাকিয়ে’ নিরেট। ভূরাজনৈতিক পাকচক্রে মতার খেলায় উদভ্রান্ত নেতানেত্রীরা দিল্লির দরবারে যখন তখন দৌড়াতে পারেন। কিন্তু এ দেশের মানুষ মোটেও দিল্লির মুখাপেী হবে না।”
এবার প্রথম বক্তা আবার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন : ‘খালেদা জিয়াই গোলমাল বাধিয়েছেন। এত দিন দেশের রাজনীতিতে একটা ব্যালেন্স ছিল। দিল্লির দালালরা সরাসরি দিল্লিকে মেনে চলার কথা বলতে সাহস পেত না। এখন শেখ হাসিনা, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেখাদেখি সুড়সুড় করে খালেদাও দিল্লিতে ভিজিট দিয়ে এসেছেন। তাই দিল্লির দালালরা এখন নির্ভয়ে অখণ্ড ভারতের নতুন গান গাইছে।’
শেষোক্ত মন্তব্যের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি থাক কিংবা না-ই থাক, এ কথা বহুলালোচিত যে, খালেদার সাম্প্রতিক দিল্লি সফর একটা ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। তাই তার প্রতিক্রিয়া যাচাই করতে আবেগবর্জিত বিতর্ক-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সেটা এখনো চলছে সুধী সমাজে। সেই সাধারণ বিতর্কের জের ধরে প্রথমে দেখা দরকার খালেদা জিয়ার এই মুহূর্তে দিল্লি সফরের ভূরাজনৈতিক কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল কি না বা কী ছিল।
এ সম্পর্কে ৭ নভেম্বর তার ‘সময়চিত্র’ কলামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল লিখেছেন : “(এ দেশে) বিএনপির (বিগত) আমলে জঙ্গিবাদী রাজনীতির প্রসার ঘটে। (ওই আমলেই তা দমনেও কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল। তবে) বিএনপির শেষ আমলে ভারতীয় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছিল। প্রথম কারণে বিএনপির প্রতি রুষ্ট ছিল আমেরিকা, ইউরোপ আর ভারত। দ্বিতীয় কারণে প্রধানত ভারত। গত আমলে বিএনপির সরকার কোনো এক বিচিত্র কারণে তাইওয়ানের একটি বাণিজ্যিক অফিস খোলার অনুমতি দিলে বিএনপির ‘ন্যাচারাল এলাই’ চীনও রুষ্ট হয়ে ওঠে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সম্পর্ক অটুট রাখতে পেরেছিল কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সাথে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে যাদের প্রভাব ক্রমেই ীয়মাণ। বিএনপি তাই এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহলের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য। ভবিষ্যতে মতায় যেতে হলে শুধু জনসমর্থন যথেষ্ট নয়, এদের সহায়তাও লাগবে, এটা বিএনপির উপলব্ধিতে না করার কথা নয়।
শক্তিশালী প্রতিবেশী ও মুরব্বিদের উপো করে এই যুগে মতায় থাকার বা মতায় আসার নজির কম। ইরানে আহমাদিনেজাদ আর উত্তর কোরিয়ার কিম ইল সুংয়ের পরিবার তা পারছেন শক্ত জাতীয় ঐক্য, আদর্শবাদ আর মোটামুটি স্বনির্ভর অর্থনীতির কারণে। ভেনিজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজ পারছেন গোটা ল্যাতিন আমেরিকায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব এবং তেলনির্ভর অর্থনীতির শক্তির কারণে। কিউবা টিকে আছে মূলত ফিদেল কাস্ত্রোর ব্যক্তিত্ব আর কিউবাবাসীর কৃচ্ছ্রমূলক আত্মত্যাগের কারণে। এই দেশগুলোর ওপরও খবরদারির চেষ্টা চলছে নিরাপত্তার নানা অজুহাতে। পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে উত্তর কোরিয়া তা উপো করে চললেও অন্যদের পে সেটি আরো বহু বছর পর্যন্ত হয়তো সম্ভব হবে না।
আগে একটা সময় ছিল, যখন আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদের মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিকÑ জ্বালানি, অস্ত্র, অবকাঠামোভিত্তিক ব্যবসায় আর আন্তর্জাতিক পুঁজির আধিপত্য বিস্তার। সোভিয়েত যুগে রাজনৈতিক আদর্শের আধিপত্যের লড়াইও জোরদার ছিল। এখন নাইন-ইলেভেনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা ইস্যু। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা একই সূত্রে গাঁথা, এই তত্ত্ব দুর্বল দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক খবরদারির একধরনের নৈতিক যৌক্তিকতা সৃষ্টি করেছে। বিএনপির সরকারের আমলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় প্রদান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক খবরদারির সুযোগকে আরো প্রসারিত করেছে এবং একই সাথে বিএনপিকে মিত্র হিসেবে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। এই পরিপ্রেেিত খালেদা জিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিএনপিকে উদার না হোক, অন্তত মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে (ভূরাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে) বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা।”
এবার দেখা যাক, খালেদার এই ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ অর্জনের প্রয়াস কতটা সফল হয়েছে। সে সম্পর্কে একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে ১৪ নভেম্বর আমার দেশ সম্পাদক (সাবেক খালেদা জিয়া সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা) মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, “মহাজোট সরকারের প্রথম আড়াই বছরে ভারত থেকে যেসব কর্তাব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করেছেন, তাদের মধ্যে কেউই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার জন্য সময় বের করতে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশী-বিদেশী কৌশল প্রয়োগে বিএনপিকে রীতিমতো ধরাশায়ী করা হয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বন্ধুরা নির্বাচনে বিএনপির অবিশ্বাস্য পরাজয়ের পরিণতিতে দলটিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক ভাবতেও শুরু করেছিলেন। ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়ন করতে না পারলেও ‘মাইনাস ওয়ান’ করতে পারা গেছে কল্পনা করে তাদের আহাদের সীমা ছিল না। চেয়ারপারসনের সাম্প্রতিক ভারত সফর দলটিকে তাই নিশ্চিতভাবেই নতুন করে মতার পাদপ্রদীপে নিয়ে এসেছে। উজ্জীবিত দলীয় নেতাকর্মীরাও আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে মতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। আগেই উল্লেখ করেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ অনেক দিন ধরেই বিএনপিকে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের তাগিদ দিয়ে আসছিল। এই সফরের মাধ্যমে তাদের সেই চাওয়াও অনেকটাই পূরণ হয়েছে। সুতরাং মতায় থাকতে চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বন্ধুহীন হয়ে পড়ার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, তারও নাটকীয় পরিবর্তন ঘটল। কাকতালীয়ভাবে বিগত চার বছরে বর্তমান মতাসীনরাই বরং বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।”
বাংলাদেশের সুশীলসমাজের যে অংশ তৃতীয় শক্তি উত্থানের মাধ্যমে নবরূপে ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়নের আশায় কিছু দিন যাবৎ নড়েচড়ে উঠছিল, তারাও দিল্লিতে খালেদা জিয়ার উষ্ণ আতিথেয়তাপ্রাপ্তিতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছেন। সফরের উষ্ণতা প্রমাণ করেছে, ভারত আপাতত অচেনা কোনো তৃতীয় শক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, সাউথ ব্লক এবং ‘র’-এর নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল মইনের মতো দাসসুলভ চরিত্র খোঁজার চেয়ে বিএনপিতে গওহর-মসিউর মার্কা চক্রকে উৎসাহিত করতেই অধিকতর আগ্রহী। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেেিত সেনাবাহিনীতে মইন-মাসুদ গং খুঁজে পাওয়া এবার অন্তত সহজ না-ও হতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো এক সফরেই বেগম খালেদা জিয়া ২০২১ পর্যন্ত মতায় থাকতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বিগ্ন করার পাশাপাশি বায়বীয় তৃতীয় শক্তিকেও হতোদ্যম করতে পেরেছেন।
অন্য দিকে, দেশের অভ্যন্তরে মিডিয়ার আনুকূল্য লাভের েেত্রও বেগম জিয়ার ভারত সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়ার বেশির ভাগ দীর্ঘ দিন ধরে ঐতিহ্যগতভাবেই ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল। বিভিন্ন দ্বিপীয় ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরণে বিএনপির দৃঢ় অবস্থানে এরা এত দিন তথাকথিত প্রতিক্রিয়াশীলতার গন্ধ খুঁজে পেত। বাংলাদেশের বুক চিড়ে ভারতকে ট্রানজিট প্রদান আমাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে বিপজ্জনক এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হলেও কয়েকটি ভারতপন্থী পত্রিকা সর্বদা ট্রানজিটের পইে ওকালতি করেছে। ট্রানজিট প্রশ্নে বিএনপির দৃশ্যত নমনীয় অবস্থান আগামী নির্বাচনে ওই সব পত্রিকার সমর্থন লাভে দলটির জন্য সহায়ক হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক গোষ্ঠী আন্দোলন ছাড়া কিংবা যৎসামান্য আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করার বিনিময়ে তাদের দাবির প্রতি দেশের সুশীলসমাজ এবং ভারতপন্থী মিডিয়ার সমর্থন লাভ করা গেলে দলীয় বিবেচনায় লাভের পাল্লাই ভারী হবে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আপসহীন শেখ হাসিনাকে নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ অপরিহার্য। সেদিক থেকেও ভারত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।”
শেখ হাসিনাকে ‘আপসহীন নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করতে’ ভারত আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে চাইবে কি না, সে প্রসঙ্গে আমরা পরে আসব। প্রথমে দেখা যাক একান্তে প্রদত্ত ভূরাজনৈতিক চাপ বা টোপ যা-ই বলা যাক, তাতে সাড়া দিয়ে মানুষের ধারণা বা পাবলিক পারসেপশনে খালেদা কী ব্যতিক্রম ঘটালেন। এ সম্পর্কে ১০ নভেম্বর কবি-প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন ‘এবার বিএনপির আওয়ামীকরণ!’ শিরোনামে ভাষ্যদান করেছেন তার ‘যুক্তি তর্ক গল্প’ কলামে। তার আশ্চর্যবোধক চিহ্নটির ব্যাখ্যা অনুসরণ না করে আমরা শুধু তার ইন্ট্রো বা মুখবন্ধটি উদ্ধৃত করব। তিনি লিখেছেন, “বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত বিজয় হলো, নাকি ভারত জয় করল বিএনপির মন, সেটাই এখন জল্পনার বিষয়। তবে এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের আভাস মিলছে। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার সাথে ভারতের সরকারপ্রধানসহ রাষ্ট্রপতি ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের যেসব বৈঠক হয়েছে, তাতে মূলত ছিল ভারতের দিক থেকে বিএনপির কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে সুস্পষ্ট বক্তব্য। মূল তিনটি বিষয়ের মধ্যে দু’টি বিষয় সরাসরি ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, যেমনÑ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া এবং ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান। তৃতীয়টি দৃশ্যত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তবে এর সাথে ছিল জামায়াত-বিএনপির সম্পর্ক, জঙ্গি-ইসলামি দলগুলোর প্রতি বিএনপির মনোভাব ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাতে বাংলাদেশে একটি ধর্মনিরপে গণতান্ত্রিক শক্তি মতায় থাকার বিষয়ে ভারতের আগ্রহ স্পষ্ট হয়। আমাদের আপসহীন নেত্রী মৌখিকভাবে এসব বিষয়ে সম্মত হয়েছেন বলে শোনা যায়। অতীতকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে তাকানোর কথা তার মুখে শোনা গেছে। ভারতীয় নেতাদের মুখেও ছিল একই ধরনের সুর।”
এখন ভারতীয় মিডিয়া আর দিল্লির ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে পাওয়া খবর থেকে পরখ করা যাক, ভারতীয় নেতারা কী চেয়েছেন এবং ‘আপসহীন’ খালেদা কী বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। ভারতের চাওয়া নিয়ে ২৮ অক্টোবর টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার বিশ্লেষণে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বলা হয়েছে (সংিেপত) : আগামী বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই নির্বাচনে জিতে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির মতায় আসার বেশ সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে।
নয়াদিল্লির নিজস্ব স্বার্থ বা পছন্দ-অপছন্দ (যাই থাক না কেন), ঢাকার মতায় কে থাকবে, তা তারা ঠিক করে দিতে পারে না। গত চার বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, তা সত্ত্বেও আরো উন্নতির সুযোগ আছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি মতায় আসে, তার পরও এই অগ্রগতি বজায় রাখতে চাইবে নয়াদিল্লি। (যেসব বিষয়ে) খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পরিষ্কার হতে চাইবে ভারত, তার মধ্যে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচনের এই ব্যবস্থা গত বছর বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি চাইছে, ওই ব্যবস্থা আবার চালু করা হোক, তা না হলে নির্বাচন বর্জনের হুমকিও তারা দিয়ে রেখেছে। যদিও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলটি সুখকর ছিল না। সেনাসমর্থিত ওই সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বিএনপি কী কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা জানতে চাইবে ভারত। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে তারা কি সত্যিই অনড় থাকবে? আরেক দফায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের কোনো পরে জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। (দ্বিতীয়) যুদ্ধাপরাধের বিচার। বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
‘বাংলাদেশের ধর্মনিরপেতা নির্ভর করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সফল সমাপ্তির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই অপরাধের জন্য যারা অভিযুক্ত হয়েছেন এবং যাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, তারা বিএনপি এবং তাদের মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান নেতা। কাজেই বিএনপি মতায় এলে তাদের আমলে বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই এ েেত্রও খালেদা জিয়ার অবস্থান কী এবং তিনি মতায় গেলে বিচার অব্যাহত রাখবেন কি না, তা জানতে চাইবে ভারত।’
দিল্লিতেই বিএনপি নেতাদের সূত্রে প্রকাশ, ভারতের ওই প্রশ্নগুলোর জবাবে বিএনপি দলনেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
অন্য দিকে জামায়াত ও ইসলামপন্থীরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আছে বলেই তারা ‘ধর্মনিরপে’ভাবে দায়িত্ব পালনে অভ্যস্ত হয়েছে। যেমন বিগত বিএনপি শাসনামলে দুই জামায়াতমন্ত্রী দুর্গাপূজার মণ্ডপে গিয়ে মূর্তিপূজারিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন। ইসলামপন্থীদের সাথে না রাখলে তারা জঙ্গিবাদের খপ্পরে পড়বে। তবে ট্রানজিট, ভারতীয় স্বার্থবিরোধীদের বাংলাদেশে জায়গা না দেয়া ইত্যাদি প্রশ্নে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ-ভারত বোঝাপড়ায় হাল আমলে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়েছে, অকপটে সেটা বজায় রাখার কথা দিয়ে এসেছেন খালেদা।
ভারত সন্তুষ্ট হয়েছে কি? বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখার্জি ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় যে মন্তব্য প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে ভারতের সন্তুষ্টি নয়, সন্দেহবাতিকের অভিব্যক্তি সুস্পষ্ট। তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপির নেতাদের ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন দেখা গেছে, যা আগে থেকে ইতিবাচকভাবেই আলাদা। এ পরিবর্তন নিয়ে অনেকে এখনো সন্দিহান। সত্যি সত্যিই উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বদলাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে অনেকেই অনিশ্চিত।
বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ভারতের সাথে সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং খালেদা জিয়া সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থই জোরের সাথে তুলে ধরেছেন। তিনি খোলাসা করে বলেছেন যে, খালেদা জিয়া ট্রানজিট নয় বরং বাদবাকি এশিয়ার সাথে সংযুক্ত হওয়ার বিষয়েই একমত হয়েছেন।
(এ ছাড়া) বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে হয়তো খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুতে জামায়াতের থেকে আলাদা হতে হবে। এ ব্যাপারে শক্তিশালী জনমত থাকলেও বিএনপি সরাসরি বিচারের বিরোধিতা না করলেও এখনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি। বাইরের সাথে সম্পর্ক যার মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কও পড়ে, তা আসলে শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিধারার পাদটীকা।
খালেদা জিয়ার ঢাকা ফেরার তিন দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মুখপাত্রকে যে বলতে হয়েছে, দলের ভারতনীতির পরিবর্তন হয়নি, তাতে ভারত ুণœ হয়েছে দেব মুখার্জি তেমনই ইঙ্গিত করেছেন। এ ছাড়া খালেদা জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর শেখ হাসিনার পুলিশি অ্যাকশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। জামায়াতকর্মীরা পুলিশকে রুখে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশেরও দ্বিধা দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের গণমিছিলে ছিল জামায়াতকর্মীদের প্রবল উপস্থিতি। দেব মুখার্জির মন্তব্যে খোলাখুলিই বলা হয়েছে, বিএনপিকে ‘জামায়াত থেকে আলাদা হতে হবে।’ এ দেশের ‘অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিধারা’ সেটা হতে দিচ্ছে না। ভারত সেদিক থেকে জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল ধারা থেকে হটাতে না পেরে অবশ্যই নিরাশ হয়েছে।
তাহলেও ভারতীয় আধিপত্যবাদী কূটনীতিরই জয় হয়েছে। মূল ধারার তিন নেতানেত্রী যারা প্রত্যেকে এক দশক বা তার কিছু কমবেশি সময় ধরে বাংলাদেশ শাসন করেছেন, তারা সবাই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে শলাপরামর্শের জন্য দিল্লির দরবারের মুখাপেী হয়েছেন। বাংলাদেশের ন্যায্য সার্বজনীন চাহিদাগুলো মেটাতে কোনো সাফ কথা কারো কাছে বলেনি ভারত। তাই আঠারোদলীয় বিরোধী জোটনেত্রী দিল্লি দরবারে হাজিরা দিয়ে যদি সব প্রশ্নে দিল্লির কাছে ‘নতজানু’ না-ও হয়ে থাকেন, দরকষাকষি ছাড়াই একতরফা যেটুকু ‘সম্মতি’ দিয়ে এসেছেন, সেটা ভারতের অর্থনৈতিক ও রণকৌশলগত সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকারের নমুনা হিসেবেই গণ্য হবে।
লেখক : বি্িযশষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট