বুধবার, ৩০ মে, ২০১২

আর্থরাজনৈতিক বিভ্রমের ঘোরে বাংলাদেশ


॥ সাদেক খান ॥


পুরোদস্তুর লুটেরা রাজত্বেও বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ঘটছে। ধাপে ধাপে চাঁদাবাজির খেসারত দেয়ার পরেও মেহনত দিয়ে, উদ্ভাবনী মেধা দিয়ে সাধারণ মানুষ নিজ নিজ পরিধিতে উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছেন। তবে অবকাঠামো খাতে কোনো উন্নয়ন না হওয়ায়, টাকার দরপতন, শেয়ার কেলেঙ্কারি, বিদ্যুৎ সঙ্কট, ব্যাংকিং বিভ্রাটের কারণে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ থমকে থাকায়, উচ্চমহলের দুর্নীতির চাপে বৈদেশিক ঋণ বা বিনিয়োগ বাংলাদেশবিমুখ হওয়ায় এই প্রবৃদ্ধির হার জনজীবনের চাহিদা আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে যৎসামান্য, দারিদ্র্য নিরসনের কষ্টিপাথরে নেতিবাচক বলেই সাব্যস্ত হতে পারে। তবে একই সাথে বলতে হয়, প্রতিকূল বিনিয়োগ পরিবেশ আর দুঃশাসনের পীড়ার মধ্যেও এ দেশবাসী যে প্রবৃদ্ধির গতিবেগ ধরে রাখতে পেরেছে, সেটাই বলে দেয় যথার্থ বিনিয়োগ পরিবেশ আর সুশাসন কায়েম হলে এ দেশের প্রবৃদ্ধির কী বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যেতে পারে।
১৭ বছর পর বাংলাদেশে ঝটিকা সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন সেই ‘বিপুল সম্ভাবনা’-র কথাই বলে গেলেন। বলেছেন : ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশীলসমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। শিাব্যবস্থাও শক্তিশালী হচ্ছে, শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতিতেও একটি গুরুত্ব বহনকারী দেশ হিসেবে নাম কিনেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিভিন্ন সূচকের মধ্যে বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমে আসছে, দারিদ্র্য দূর করার পদপে নেয়া হচ্ছে। এ সব কিছুর জন্য বাংলাদেশের মানুষেরই প্রশংসা করতে হবে, যারা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন।’
সরকারি হস্তেেপর নীতিবিভ্রাটে দরিদ্র সঞ্চয়ীদের পুঁজিতে গড়ে ওঠা ‘অনন্য’ ুদ্রঋণ সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংকের বিড়ম্বনার কথা ওঠায় তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করি গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে যদি এ দেশের সরকারের কোনো পদেেপর কারণে গ্রামীণ ব্যাংক তিগ্রস্ত হয়।’
বাংলাদেশের স্তুতিবাদই করছিলেন হিলারি। তার কথায় গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ওই সামান্য মতান্তরেই ফুঁসে উঠলেন ‘অনুদার গণতন্ত্রচর্চা’-র সাাৎ মাস্টারমশাই শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অকারণ ঝগড়া বাধিয়ে বসলেন তার মুরব্বি ভারতশক্তির মুরব্বি একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। বিষদাঁতের ছোবল মেরে বললেন, হিলারির বক্তব্য অনাকাক্সিত, গ্রামীণ ব্যাংকে এক টাকাও দেয়নি বিশ্বব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকে বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়নি, দেয়ার কথাও নয়। কারণ বৃহৎ ঋণেই উন্নয়নশীল দেশের সরকারকে প্রকল্প বাস্তবায়নম করতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের পুঁজির শতকরা ৯৭ ভাগই তো ুদ্রঋণগ্রহীতা সদস্য ও সঞ্চয়ীদের। তাদের মালিকানা অর্থমন্ত্রী অস্বীকার করছেন না কেন? আইনি ভিত্তি ছাড়াই কেন মিথ্যা দাবি করছেন, গ্রামীণ সরকারি ব্যাংক? 
এর আগে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বৈদেশিক ঋণদাতা প্রায় সবাইকেই বৈরী করে তুলেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির জাল সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক তার একটা প্রাথমিক জরিপ ও তদন্ত রিপোর্ট অর্থ মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করে। তার জেরে সংশ্লিষ্ট দু-চারজন কর্মকর্তাকে তলব আর জেরা করে কোনোরকম গোয়েন্দা তদন্ত ছাড়াই দুদক (ওপরের নির্দেশে?) দায়সারা একটা রিপোর্ট দিয়ে বলে, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ নেই, তা ছাড়া মূল প্রকল্পই শুরু হয়নি। সেই সাফাই রিপোর্টের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে দুষলেন, যে প্রকল্প শুরুই হয়নি সেখানে দুর্নীতির গন্ধ আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাংক ভণিতা করছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক কানাডার ‘মাউন্টেড পুলিশ’-এর তদন্ত রিপোর্ট উদ্ধৃত করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাল, পরামর্শক নিয়োগে মোটা অঙ্কের আগাম উৎকোচ দাবি করা হয়েছে; পরামর্শক নিযুক্ত হয়ে সেই উৎকোচ প্রদানও করেছে একটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান। ব্লগ সূত্রে প্রকাশ, যে দুজনের ব্যাংক হিসাবে সেই অর্থ পাঠানো হয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ উৎকোচের জমারশিদ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আমরা দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছি। অথচ ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ অর্থমন্ত্রী এখনো তোতাপাখির মতো বুলি আওড়ে চলেছেন : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি; বিশ্বব্যাংকের ‘সন্দেহ’ অমূলক। ফলাফল : বৈদেশিক সহায়তার ছাড় না পেয়ে গেল বছরের উন্নয়ন বাজেটে কাটছাঁট, নতুন অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 
অর্থনীতির হালের কথায় ফেরা যাক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে। চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ হবে। তবে মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৭৭২ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭১। বিবিএস সূত্র মতে, আমদানি শুল্ক বাদ দিয়ে জিডিপি পরিমাপের প্রধান ১৫টি খাত ধরে হিসাব করে এর প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিবিএস আরো বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে স্থিরমূল্যে জিডিপির আয়তন দাঁড়াবে চার লাখ নয় হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। আর চলতি মূল্যে এর আয়তন নয় লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিবিএস যে হিসাব প্রাক্কলন করেছে, সেটাও বেশি মনে হচ্ছে। কেননা রফতানি কমেছে। আবার মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে। আমদানি খরচ বেড়েছে।
অন্য দিকে চলতি অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
এই প্রাক্কলিত পরিসংখ্যান নিয়েও গোলমেলে চিন্তায় চ্যাম্পিয়ন অর্থমন্ত্রী মুহিত তারই অধীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এখন বিবাদ বাধিয়ে বসেছেন। তিনি দাবি করছেন : জিডিপির পরিমাণ কম করে দেখানো হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশের চেয়ে অপোকৃত ভালো পরিসংখ্যানব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই জিডিপি যথাযথভাবে নিরূপণ করা হয় না। আরো বলেছেন : ‘জিডিপি শুধু কম নিরূপিত হয় না, এটা ভয়াবহ রকম কম নিরূপিত হয়। প্রায় ১৫ বছর পর দেশে নতুন পরিসংখ্যানব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এতে সব তথ্য-উপাত্ত নতুন করে সংশোধিত আকারে দেখা সম্ভব হবে।’
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রাক্কলনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ, বিবিএস বা এডিবির প্রাক্কলন থেকে কিছুটা বেশি মাত্র, তবে পূর্বঘোষিত ল্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৫% বা আধা শতাংশ কম। এ নিয়ে বিবাদে কী লাভ? 
জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি প্রসঙ্গেই আদমশুমারি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, পঞ্চম আদমশুমারি পুনর্নিরীণ করে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ হয়েছে। গত চারটি আদমশুমারির তুলনায় এবারের আদমশুমারি অনেক ভালো হয়েছে। আরো বলেন, জাতিসঙ্ঘ পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা (ইএনএফপিএ) প্রদত্ত জনসংখ্যার হিসাব ঠিক নয়; এ দেশে প্রস্তুত পরিসংখ্যান নিয়েই এখন থেকে চলতে হবে, ইউএনএফপিএ-র জরিপের দিন ফুরিয়ে গেছে। অর্থাৎ যেন গায়ে পড়ে জাতিসঙ্ঘের সঙ্গেও অকারণ ফ্যাসাদ বাধাবার তক্কে আছেন অর্থমন্ত্রী।
এখন শেখ হাসিনা সরকারের বলা যায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন-পূর্ব শেষ বাজেট দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তাতে নির্বাচনমুখী নানা আজগুবি প্রকল্প, নানা বাগাড়ম্বর থাকছে সেটা স্বাভাবিক, সেসব বাস্তবায়নযোগ্য হবে কি না তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। লোকে শুধু ভয় পাচ্ছে অর্থমন্ত্রী নয়া বাজেটে আরো কালো টাকা সাদা বানানোর বাড়তি সুযোগ দিয়ে এবং মোটা চাঁদাবাজ আর শেয়ারদস্যুদের সেসব টাকা বেবাক বিদেশে পাঠানোর নানা ফাঁকফোকর শেষবারের মতো তৈরি করে দিয়ে দেশের নাজুক অর্থনীতির আরো কত সর্বনাশ ঘটাবেন।
এরই মধ্যে রাজনৈতিক গুমোটও বেশ পাকিয়ে উঠেছে। তার সংপ্তি একটা বিবরণ এসেছে বিলেতের বিখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকায় এক জোড়া প্রতিবেদনে। তার একটির শিরোনাম : ‘বাংলাদেশে রাজনীতি, এদিকে-ওদিকে ঠুকে মরছে (সে দেশের মানুষ)’। আরেকটির শিরোনাম : ‘বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি’। সারকথা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ভয়ঙ্কর পথে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারতই পারে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সর্বনাশ ঘটানো থেকে নিবৃত্ত করতে। কারণ ঢাকার (বর্তমান সরকারের) ওপর প্রভাব রয়েছে একমাত্র রাষ্ট্র ভারতের। বাংলাদেশে কার্যকর গণতন্ত্র চাইলে দিল্লির উচিত হবে সে জন্য আরো জোর দিয়ে (শেখ হাসিনার কানে) কথা বলা।
দি ইকোনমিস্টের দুই সংবাদভাষ্যকারের কাছে যে কথা স্পষ্ট নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে যেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, সেটা এই যেÑ দিল্লি বাংলাদেশে ‘কার্যকর গণতন্ত্র’ চায় না, একটা বাধ্য সরকার চায়। হাসিনাকে সুপরামর্শ দেয়ার কোনো নিয়ত ভারতশক্তির নেই, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র সাব্যস্ত করাই তার ল্য। এ দেশবাসীর কাছে দিল্লির এমন মতলবের অকাট্য প্রমাণ, বারবার উচ্চপর্যায়ে প্রতিশ্র“তি দিয়েও সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না, বেড়েই চলেছে; টিপাইমুখ নিয়ে দুইমুখী কথা বলে নদী-পরিবেশ নাশ আর ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে ওই বাঁধের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে; বারবার তারিখ দিয়েও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে না; স্বীকৃত স্থলসীমান্ত মীমাংসার কাজ ঝুলে আছে। দিল্লি যে এখন দুই দিকেই উসকাচ্ছে, তারও একটা ইঙ্গিত আছে ওই জোড়া রিপোর্টে। তাতে আরো বলা হয়েছে : 
“সাধারণ নির্বাচনের ১৮ মাস বাকি। এ সময় বিরোধী দল রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যস্ত। বিরোধী নেতাদের বড় অংশকে জেলে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। ধারণা করা হয় এর পেছনের কারণ পুরনো শত্র“তা। নির্বাচন কে পরিচালনা করবে তা নিয়ে উভয় পরে মধ্যে বিতর্ক। এ ছাড়া বাংলাদেশে খাদ্যমূল্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, লাগাতার বিদ্যুৎসঙ্কট, সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ তো রয়েছেই।
“বেশ কয়েকটি রহস্যজনক গুমের ঘটনা ঘটেছে। এক মাস আগে বিএনপির এক রাজনীতিক অপহৃত হয়েছেন এবং সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে আরো দুজনকে খুন করা হয়। সহিংসতার অভিযোগে ৩৩ জন রাজনীতিককে জেলে ঢোকানো হয়েছে, যাদের মধ্যে সিনিয়র এমপিরাও রয়েছেন। এর ফলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আরো কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘটনা রয়েছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কিছু রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একজন সৌদি কূটনীতিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের পর এক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে খুন করা হয়। দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করায় সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যা করা হয়। 
“জানুয়ারিতে ছিল ব্যর্থ অভ্যুত্থানের গুজব, যা সেনাবাহিনীর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ল্েয ব্যবহার করা হয়।
“পরবর্তী নির্বাচন কার তত্ত্বাবধানে হবে এবং তা আসলেই নিরপে হবে কি না তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এটা ইতোমধ্যে এত তীব্র হয়ে উঠেছে যে, অনেক পর্যবেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য, মারাত্মক লোডশেডিং এবং নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্র“তি ভঙ্গে ুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
“সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। দাতাদের প থেকে দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই; পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক সাহায্য বন্ধ করেছে। এ বিষয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী পাঠিয়ে জাপান সুরাহা করার তাগাদা দিয়েছে। রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তার সহকারীর গাড়িতে টাকাভর্তি ছালার ব্যাগ উদ্ধার করেছে। ওই মন্ত্রীকে ক্যাবিনেটে পুনর্বহাল করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ একটি তদন্তের মাধ্যমে তাকে নিষ্কলুষ করা হয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের নিরেপতা বহাল থাকা নিয়ে বড় রকমের সংশয় রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ সপ্তাহে হিলারি কিনটনের হুঁশিয়ারি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক অর্থাৎ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ যেন থাকে।
“বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বহির্বিশ্ব কিছুটা চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে, ইউনূসের প্রতি অসদাচরণ ও হয়রানিমূলক তৎপরতার নিন্দা করেছেন ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রদূতেরা। 
“কিন্তু সরকারকে অনড় মনে হচ্ছে। হিলারির প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করতেই যেন সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করছে, এর মাধ্যমে ব্যাংকটির মালিকানা সরকার নেবে কিংবা ধ্বংসও করে ফেলতে পারে।”
মন্তব্য নি®প্রয়োজন। 
লেখক : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন