মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

জাতিরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ধড়িবাজ মনস-াত্ত্ব্বিক যুদ্ধ






॥ সাদেক খান ॥
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটির বিরুদ্ধে লাগাতার মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ভারতীয় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অংশবিশেষ। এই যুদ্ধের প্রধান কৌশলী হচ্ছে ভারতের বহির্দেশীয় গোয়েন্দা সংস'া রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং, সংক্ষেপে র। এই
মনস-াত্ত্বিক যুদ্ধের ধুরন্ধর পরিকল্পনার শিকার হয় কখনো ব্যক্তিবিশেষ, কখনো বা কোনো রাজনৈতিক দল, কখনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তবে চূড়ান-ভাবে খোদ বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রটির ভাবমূর্তি বিনাশই তার লক্ষ্য। আরো লক্ষ্য এ দেশের জনমনে সংশয় আর সন্দেহের বীজ বপন এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি।

র প্রচারযন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার তথ্যসন্ত্রাস ও চরিত্রহনন। এই বিদেশী গোয়েন্দা সংস'াটি প্রচার অপকৌশলের মাধ্যমে বিশ্ববাসী এবং বাংলাদেশের জনগণকে এটাই দেখাতে চায় যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত মেধাসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র পরিচালনার সদগুণ ও চরিত্রবলের অধিকারী নয়। র তার এই কৌশল বাস-বায়নপ্রক্রিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর থেকেই শুরু করে। ভারতের র প্রভাবিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীটি বাংলাদেশের দুর্বলচেতা অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদের কানে এই মন্ত্র দিতে থাকে যে, স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নেতিবাচক; ভারতের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র বা সিকিমের মতো একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েই মাত্র বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে আন-র্জাতিক ত্রাণ সহায়তার একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে যে মন-ব্য করেছিলেন, ভারতের র-প্রভাবিত মিডিয়া সেটা লুফে নিয়েছিল। ভারত সরকারিভাবেই জোর প্রচারণা চালিয়েছিল যে, বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীরা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিল্লি আর মুম্বাইয়ের বেশ কিছু বসি-বাসীকে বাংলাদেশের সীমান- দিয়ে এ দেশে ‘পুশ-ইন’ করার জবরদসি- কার্যক্রম দীর্ঘ দিন অনুসরণ করেছে। কিন' এত সবের পরও বাংলাদেশ নতুন সহস্রাব্দে একটি সম্মানজনক অবস'া নিয়ে শুধু টিকে থাকেনি, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে। বিশেষত সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং মানবসম্পদের উৎপাদনক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সি'তিশীল প্রবৃদ্ধি ঘটছে। র-এর কৌশলবিদেরা হয়তো এখন এ কারণে আরো বেশি নড়েচড়ে বসেছেন যে, পূর্ব ভারতের পেটের ভেতর অবসি'ত বাংলাদেশের তুলনামূলক সফলতা ও সমৃদ্ধির দৃষ্টান- স্বাধীনতাকামী উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিদ্রোহে উৎসাহিত করবে। তাই তারা যে বাংলাদেশবিরোধী মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ লক্ষ্যেই তারা বাংলাদেশের বর্তমান ‘বন্ধু’ সরকারের সাথে বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কার্যত একধরনের যষ্টি আর মিষ্টি ব্যবহার বা ‘স্টিক অ্যান্ড ক্যারট’ নীতি অনুসরণ করে এ দেশবাসীকে ব্যতিব্যস- রাখছে।

সীমান-কে বিএসএফের ‘বধ্যভূমি’তে পরিণত করা, তিস-া নদীর পানিবণ্টন নিয়ে গড়িমসি, সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা অববাহিকার প্রতিবেশ ও অর্থনীতি ধ্বংসে একতরফাভাবে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, ব্রহ্মপুত্রের পানিকে দক্ষিণ ভারতের দিকে সরিয়ে নেয়ার আন-ঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পুনরুজ্জীবন, ৩০ বছরের অসম গঙ্গাচুক্তির পর্যালোচনা নিয়ে ‘রাজনৈতিক’ উত্তাপ ছড়াতে ফারাক্কার ফাটল দিয়ে বাংলাদেশে অলক্ষ্যে শরিকানার অতিরিক্ত নদীপ্রবাহ প্রবেশের ছুতা আবিষ্কার, এসবই বাংলাদেশকে চাপে রাখতে র-এর কৌশল। তাদের এই কৌশল বাংলাদেশের ভারতবান্ধব সরকারকেই এক বিব্রতকর অবস'ায় ফেলেছে।

বাংলাদেশবিরোধী ভারতের এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিব্রতকর অবস'ায় ফেলার সর্বশেষ দৃষ্টান- বানোয়াট একটি চাঞ্চল্যকর সংবাদ। সংবাদটি প্রায় একইসাথে বিদেশী মিডিয়া ও বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। গত ক’দিনেই ধরা পড়ে গেছে, খবরটি আসলে ভুয়া এবং এর পেছনে একজনমাত্র নাম ভাঁড়ানো সাংবাদিক কাজ করেছেন। মূল ঘটনা হলো, পাকিস-ানের সামরিক গোয়েন্দা সংস'া বা আইএসআই-এর তহবিলের অপব্যবহারসংক্রান- একটি অভিযোগের শুনানির জন্য পাকিস-ান সুপ্রিম কোর্ট সংস'াটির এক সাবেক প্রধান লে. জে. (অব:) আসাদ দুররানিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। অভিযোগ ছিল, আইএসআই ১৯৯১ সালে
পাকিস-ানের সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে অবৈধভাবে সরকারি টাকা খরচ করেছিল এবং এ কাজ করতে গিয়ে সংস'াটি পাকিস-ানের কয়েকজন প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে মোটা টাকা দিয়েছিল। পাকিস-ান সুপ্রিম কোর্টের কাছে দেয়া সাক্ষ্যে দুররানি সেই অবৈধ সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতাদেরও দলগুলোর নাম প্রকাশ করেন। রিপোর্ট মতে, এ ধরনের একটি দল ছিল বালুচ ন্যাশনাল পার্টি, অন্যরা নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ এবং আরো ছিলেন কয়েকটি ইসলামি দলের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ। গোটা বিষয়টিই পাকিস-ানের অভ্যন-রীণ ব্যাপার এবং সুপ্রিম কোর্ট অভ্যন-রীণ গণতান্ত্রিক বিকাশ বিঘ্নিত বা নিয়ন্ত্রিত করার বিষয়টিকেই আইনগতভাবে খতিয়ে দেখতে চেয়েছিল। র আসাদ দুররানির সাক্ষ্যকে দুবাইয়ের খালিজ টাইমসে প্রকাশ করার ফন্দি আঁটে এবং সেই সাথে এই মিথ্যা জুড়ে দেয় যে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে আইএসআই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) টাকা দিয়েছিল।

খালিজ টাইমস ও বাংলাদেশের দু’টি পত্রিকায় এই রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের সরকারি দলের নেতারা এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং তার নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন। তারা বক্তব্য-বিবৃতিতে বলতে থাকেন, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য ‘১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি’র কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এবং বেগম জিয়ার এখন ‘পাকিস-ানে চলে যাওয়া’ উচিত। বিএনপি এই খবরের জোরালো প্রতিবাদ জানায় এবং এর সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে। কিন' সরকারি দল নিশ্চুপ হয়নি। এই ভুয়া খবরটিকে ইস্যু বানিয়ে সরকারদলীয় সদস্যরা জাতীয় সংসদকেও উত্তপ্ত করে ছাড়েন। তারা বিএনপি ও বিএনপি নেত্রীকে লক্ষ্য করে সংসদে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় তোলেন। একইভাবে দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া তা নিয়ে হইচই বাধায়, কোনো কোনো বিদেশী মিডিয়াতেও রিপোর্টটি পুনর্মুদ্রিত হতে থাকে। অবশেষে দৈনিক নয়া দিগনে- প্রকাশিত লে. জে. (অব:) আসাদ দুররানির একটি সাক্ষাৎকার এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার অবসান ঘটায়। দুররানি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, পাকিস-ান সুপ্রিম কোর্টে দেয়া সাক্ষ্যের কোথাও তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নাম উল্লেখ করেননি এবং আইএসআই-এর তহবিল গ্রহণকারীদের তালিকায় বিদেশী কেউ ছিল না। এটা পাকিস-ানের সম্পূর্ণ অভ্যন-রীণ ব্যাপার। পরে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকাও (২৩ মার্চ) আসাদ দুররানির একটি সাক্ষাৎকার নেয় এবং দুররানি তার সেই সাক্ষাৎকারটিতে একই কথা বলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ১৯৯১ সালে আইএসআই-এর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, এই মিথ্যা রিপোর্টটি নিয়ে কিভাবে প্রচারবাদ্য তৈরি করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে সাপ্তাহিক ব্লিৎজ নামের বাংলাদেশ একটি অনলাইন ইংরেজি পত্রিকায় ২০ মার্চ বিস-ারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট থেকে এ সম্পর্কিত মোটামুটি এ রকম একটি চিত্র দাঁড়ায় : “দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী নামে র-এর একজন অ্যাজেন্ট-সাংবাদিক ঢাকার বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকার দিল্লি প্রতিনিধি। গত ২ মার্চ র-এর উচ্চপদস' কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে ডেকে পাঠান এবং তাকে রীতিমতো এসকর্ট করে নয়াদিল্লির র-এর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। দীপাঞ্জন সেখানে বসেই এই রিপোর্টটি তৈরি করেন এবং সেটি দুবাই থেকে প্রকাশিত ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মালিকানাধীন খালিজ টাইমসে পাঠিয়ে দেন। খবরটি যাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেয়া হয়। দীপাঞ্জনের রিপোর্টটি খালিজ টাইমসে প্রকাশিত হওয়ার পর ভারত সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দু’টি পত্রিকার সম্পাদককে টেলিফোন করে সেই রিপোর্টটি তাদের পত্রিকায় ‘সর্বোচ্চ যত্ন’ সহকারে প্রকাশ করতে পরামর্শ দেন। এর মধ্যে বাংলা পত্রিকাটির রিপোর্টটিতে এই বলে রঙ চড়ানো হয় যে, বিএনপির অর্থ গ্রহণের কথা উল্লেখ করা না হলেও আসাদ দুররানির সাথে সম্পর্কের বিষয়টি পাকিস-ানের দ্য নিউজ এবং বহুল প্রচারিত দৈনিক বিজনেস রেকর্ডারেও প্রকাশিত হয়েছে। এই একই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী ১৫ মার্চ ভারতের ডেইলি মেইল পত্রিকায়ও একই রিপোর্ট প্রকাশ করেন, তবে এবার সংক্ষেপিত স্বনামে। মেইলে তিনি পাকিস-ানি ৫০ মিলিয়ন রুপির স'লে ৫০০ মিলিয়ন রুপির কথা লিখেন। খালিজ টাইমসে তিনি লিখেছিলেন যে, আইএসআই প্রধান বিএনপিকে ৫০ মিলিয়ন রুপি দিয়েছিল।’’

এরপর একই দীপাঞ্জন ১৬ মার্চ তারিখে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় লিখলেন, ‘সমপ্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত দৈনিক খালিজ টাইমস এই অভিযোগ করে যে, আইএসআই ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৫০ কোটি রুপি দান করেছে। বিএনপি ওই নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করেছিল।’
দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী ইন্ডিয়া টুডেসহ ভারতের অন্য পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত তার রিপোর্টের কোথাও এ তথ্যটি উল্লেখ করেননি যে, খালিজ টাইমসের রিপোর্টটিও তারই লেখা ছিল। পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস'া বাসস ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্টকেই হুবহু তুলে দিয়ে সব পত্রিকায় খবরটি পাঠায়। ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটির সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোনো গরজই বাসস দেখায়নি।

দিল্লি প্রেস ক্লাবের গুজব, ‘‘দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনার দাওয়াত করে এনেছিলেন এবং এ ধরনের একটি ‘চমৎকার রিপোর্টের’ জন্য তাকে ‘পারিতোষিক’ দানের ব্যবস'া করেছিলেন। নয়াদিল্লির একটি রেসে-ারাঁয় বাংলাদেশের হাইকমিশনার দীপাঞ্জনের সাথে গোপনে মদ্যপানে মিলিত হন, তিনি অবশ্য সরকারি গাড়ি নিয়ে যাননি। বাংলাদেশের ‘বিশেষ পরিবার’-এর একজন সদস্যও দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে খালিজ টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টের জন্য তাকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতে ভারতে যান।’’

অন্য দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে ঢাকার সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, প্রধান বিরোধী দল আইএসআই-এর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল, সরকার দলের এই অভিযোগের উৎস কী? দীপু মনি খোলামেলাভাবেই খালিজ টাইমসকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা খালিজ টাইমস থেকেই এসব কথা জানতে পেরেছি। পাকিস-ানের সামরিক গোয়েন্দা সংস'ার সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি সুপ্রিম কোর্টে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তার অনুলিপি চেয়েছে বাংলাদেশ। অনুলিপি পেলেই এ ব্যাপারে বিবৃতিতে বিস-ারিত জানানো হবে।’ ইতোমধ্যে ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে আইএসআই-এর অর্থ দেয়ার খবর ২২ মার্চ পাকিস-ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। আরো বলেছে, এই অপপ্রচার বাংলাদেশ-পাকিস-ান সম্পর্ক নষ্ট করার একটি চক্রান-। দীপু মনি এ কথাটি শুনেছেন বলেও ২৪ মার্চ সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তবে বলেন যে, এ ব্যাপারে দুররানির হলফনামার সত্যায়িত অনুলিপি না পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে কোনো কিছু বলা যাবে না।

অনলাইন সাপ্তাহিকটি দাবি করেছে, হলফনামার একটি অনুলিপি গত ১৯ মার্চ ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে পৌঁছে এবং সেটি তাৎক্ষণিকভাবেই ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়; অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর সরকারি দলের নীতিনির্ধারকেরা ইস্যুটিকে স্রেফ ‘চেপে যেতে’ নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আওয়ামি লীগ নেতৃত্বের অন্দর মহলের খবর, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে এ দেশে ‘পাকিস-ানের অ্যাজেন্ট’ বলে দীর্ঘ দিন থেকে যে অপবাদ দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা, সেই প্রচারণা অব্যাহত রাখা হবে। খালিজ টাইমস-ইন্ডিয়া টুডে-বাসস চক্রের প্রচারবাদ্যে আসাদ দুররানির সাক্ষ্যসংক্রান- বানোয়াট রিপোর্ট লুফে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল কিছুটা বিপাকে পড়েছে বটে, কিন' পাকিস-ানপন'ী বলে বিএনপির গায়ে কালিমা লেপনের এখনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন সরকারি দলের বাঘা পরামর্শদাতারা। তাই ২৪ মার্চ সিলেটে জনসভায় দীপাঞ্জন সূত্রের কোনো উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো বলেছেন : ’৭১ সালে আমরা যাদের পরাজিত করেছি সেই পাকিস-ানিদের কাছ থেকে যারা টাকা নেয়, তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়। অন্য দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলে চলেছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিএনপি আইনগত ব্যবস'া নেবে। এভাবে ফ্যাসাদ বাধিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ও বিরোধী দলনেতা উভয়েরই মানহানিকর একটা গোলকধাঁধার ঘোর পাকিয়ে তুলতে অনেকটা সফলকাম হয়েছে বৈকি এই জাতিরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারতীয় মনস-াত্ত্বিক যুদ্ধের অপকৌশল।
লেখক : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট